▶ প্রশ্ন: ১০ জন প্রসিদ্ধ মুফাসসির তাবেয়ীর পরিচয় দিন। তাবেয়ীদের যুগে তাফসীরের বৈশিষ্ট্য লিখুন ▶ বিষয়: (IST-505) Principles and History of Tafsir Literature ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
তাবেয়ী দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গী অর্থাৎ সাহাবাদের সাথে দেখা পাওয়া ঈমানদার ব্যক্তিদের বুঝানো হয়। তাবেয়ীদের মধ্যে অনেক জ্ঞানী ব্যাক্তি রয়েছেন যারা ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাবেয়ীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের জীবনী থেকে অনুসরণীয় বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
১০ জন প্রসিদ্ধ মুফাসসির তাবেয়ীর পরিচয়
অসংখ্য তাবেয়ীগণ ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন বিভাগে বিশেষ তাফসীর শাস্ত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ১০ জন প্রসিদ্ধ মুফাসসির তাবেয়ীর পরিচয় দেওয়া হল-
আরো পড়তে পারেন: শানে নুযূল কী? শানে নুযূল জানার গুরুত্ব কী? আল-কুরআন খন্ডাকারে নাযিল হওয়ার কারণ কী? আলোচনা করুন।
(১) আবুর আলিয়া (রাঃ)
তাঁর প্রকৃত নাম রাফি ইবনে মিহরাব, তিনি জাহেলী ও ইসলাম উভয় যুগ পেয়েছেন। তাবিঈগনের মধ্যে তাঁকে অত্যন্ত নির্ভর বলে মনে করা হতো। তিনি সুচারু রূপে কুরআন হিফয করতেন। ইলমে কিরাআতে অভিজ্ঞ ছিলেন। ইবন আবী দাউদ (র:) বলেন, সাহাবীগনের পরে ইলমে কিরাআতে আবুল আলিয়া এর চেয়ে অন্য কেউ অধিক অভিজ্ঞ লোক ছিলো না।
(২) মুহাম্মদ ইবন কাব আল কুরযী
তিনি মদীনার অধিবাসী ছিলেন। উবাইসহ হযরত আলী, ইবন আব্বাস প্রমুখের নিকট থেকে রিওয়ায়েত করেছেন। নির্ভরযোগ্যতা আদালত, তাকওয়া, অধিক হাদীস বর্ণনা ও আল কুরআন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। ইবন আউন (রা:) বলেন, কুরআনের তাবীল সম্পর্কে কুরযীর চেয়ে অভিজ্ঞ অন্য কাউকে আমি দেখিনি।
(৩) যায়িদ ইবন আসলাম (র)
তিনি মদীনার অধিবাসী। ফকীহ এবং মুফাস্সির হিসাবে সকলের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন এবং সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন তাবিঈ ছিলেন। ইমাম আহমাদ আউ হাশিম, নাসাঈদসহ অনেক মুহাদ্দিসের নিকট তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছিলেন। তাঁর একটি মৌলিক তাফসীর প্রন্থ রয়েছে। তিনি নিজস্ব মতামতের ভিক্তিতে তাফসীর করাকে জায়েয মনে করতেন।
(৪) আলকামা ইবন কায়েস (র)
তিনি কুফার অধিবাসী ছিলেন। হযরত উমর, উসমান, ইবন মাসউদ (রা) প্রমুখের নিকট থেকে তাফসীর ও হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি অত্যন্ত আমানতদার, মুক্তাকী ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। ইমাম আহমদ ও সিহাহ সিত্তাহ সংকলকগণ সকলেই তাঁর রিত্তয়ায়েতের উপর আস্থাশীল ছিলেন।
আরো পড়তে পারেন: আল-কুরআন এর পরিচয় দিন। কুরআন নাযিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও কুরআন মাজীদে বর্ণিত মূল বিষয়সমূহ আলোচনা করুন
(৫) মাসরুক
তিনি খলিফা চতুষ্টয়, ইবন মাসউদ, উবাই ইবন কাব (র:) প্রমুখের নিকট থেকে রিওয়ায়েত করেছেন। তিনি বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। হাদীসের সনদের সমালোচকগন তাঁর সততা ও নির্ভরযোগ্যতায় কোন প্রশ্ন তোলেননি।
(৬) আল আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ (র)
তিনি প্রসিদ্ধ তাকিঈগনের মধ্যে প্রধান ছিলেন। আবু বকর, উমর, আলী বিল্লাল (র) প্রমুখের নিকট থেকে রিওয়ায়েত করেছেন। তাবিঈগনদের যুগে তিনি একজন প্রসিদ্ধ মুজাহিদ ও নেককার নির্ভরযোগ্য মুফাস্সির ছিলেন। সিহাহ সিত্তাহ সংকলকগন তাঁর সনদে রিওয়ায়েত গ্রহণ করেছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতেন। তিনি দুনিয়া বিমুখ ভোগবিলাস বিমুখ ছিলেন। ফাতওয়া প্রদান করতেন। ৭৪ হিজরীতে তিনি কূফায় ইন্তিকাল করেন।
(৭) মরবা আল হামাদানী (র)
তিনি কুফার অধিবাসী ছিলেন। তিনি অত্যন্ত আবিদ ও নেককার ব্যাক্তি ছিলেন। আবু বকর, উমর, আলী প্রমুখের নিকট থেকে রিওয়ায়েত করেন। তিনি প্রতিদিন ৬০০ রাকাআত নামায পড়তেন।
(৮) আমের আশ শারী (র)
তিনি কূফার বিচারক ছিলেন। ৫০০ সাহাবীর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি ৪৮ জন সাহাবী থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। ইবন উয়ইনা বলেন, শাবী (র) তাঁর যুগে শ্রেষ্ঠ। সংকলকগন তার সনদের রিওয়ায়েত গ্রহণ করেছেন। তিনি অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদাশীল তাকিঈ মুফাস্সির ছিলেন। তিনি তাফসীর বর্ণানা করতেন এবং এ সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা চালাতেন।
(৯) হাসান আল বাসরী (র)
তিনি অত্যন্ত বাগ্মী, বুযুর্গ ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি খুব সুন্দর ওয়াজ করতেন এবং শ্রোতাদের অন্তরে গভীর প্রভাব বিস্তার করতেন। হযরত আলী, ইবন মাসউদ সহ অনেক সাহাবী ও পরর্তীতে তাবিঈদের নিকট জ্ঞান অর্জন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আল কুরআন ও সুন্নাহ এবং হালাল হারামের বিধান সম্পর্কে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পারদর্শী ছিলেন।
(১০) কাতাদাহ (র:)
হযরত আনাস, সীরীন, ইকরাম, আতা প্রমূখ নিকট থেকে তিনি রিওয়ায়েত করেছেন। তিনি অসাধারন স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন। আরবদের কবিতা, ইতিহাস, বংশ তালিকা সম্পর্কে তার গভীর পাণ্ডিত্য ছিল। তাফসীরের ক্ষেত্রে প্রচুর সুখ্যাতি ছিল তাঁর। এমনকি তাঁর সমসাময়িক অনেকের উপর প্রাধান্য দেয়া হতো। হাদীস সংকলকগণ তাঁর বিওয়ায়েতের উপর নির্ভর করতেন। তাফসীর প্রন্থাবলীতে তার প্রচুর ব্যাখ্যা লক্ষনীয়।
তাবেয়ীদের যুগের তাফসীরের বৈশিষ্ট্য
- তাবিঈনদের যুগে তাফসীরের ক্ষেত্রে ইসরাঈল ও নাসারাদের প্রচুর বক্তব্য অনুপ্রবেশ করে। কেননা তাদের অধিকাংশই আহলে কিতাবের কাছ থেকে রিওয়ায়েত গ্রহণের ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শন করেন। বিশেষত সৃষ্টি জগতের সূচনা, এর বিভিন্ন সৃষ্টি ও জগতের রহস্য বিষয়ক মাসয়ালার ক্ষেত্রে তাবিঈন (র) কিছু কিছু ইসরাইল ও নাসারাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন।
- তখনও তাফসীর মৌলিক বর্ণনার ভিক্তিতেই চলে আসছিল। তাঁরা সাহাবীদের থেকে রিওয়ায়েত করতেন। এমনকি তাবিঈগণ একে অন্যর থেকে তাফসীর রিওয়ায়েত করেন। কিন্তু তারপর এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্টতা কেন্দ্রিক বিশেষত্ব বিরাজ করাছিল। মক্কাবাসীরা হযরত ইবন আব্বাস, মদীনাবাসীরা হযরত উবাই ও ইরাকী কুফীগন হযরত ইবন মাসউদ (রা:) কে তাফসীরের ক্ষেত্রে প্রধান্য দিয়েছেন।
- তাবিঈনের যুগেই ফিকহভিত্তিক মতভেদের সূচনা হয়। যা তাফসীরের ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করে। যে জন্য এমন তাফসীর করা শুরু হয়ে যায়, যা অনেকটা ঐ ধরনের মতভেদেরই রূপ দেয়।
- এ যুগে তাফসীর শাস্ত্রের বিকাশে সনদের বিশেষ গুরুত্ব ছিল।
- এ যুগে তাফসীরের মধ্যে মাজহাব কেন্দ্রিক চিন্তাধারা ঢুকে পড়ে।
- মক্কায় প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় কুরআনের শাব্দিক ব্যাখায় প্রতি বেশি জোর দেয়া হতো।
- মক্কা ও ইরাকে তাফসীর চর্চার স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার অনুমতি প্রদান করা হতো।
- মদিনার মাদরাসায় বর্ণনামূলক তাফসীরকে প্রধান্য দেয়া হতো বেশি।
- মক্কার মাদরাসায় ঐতিহাসিক আলোচনা ও ইসরাঈল রেওয়াত বেশি গ্রহণ করা হতো।
উপসংহার
তাঁরাই হলেন প্রসিদ্ধ প্রধান তাবিঈ যাদের তাফসীর সম্পর্কে অধিকাংশ বর্ণনা সাহাবায়ে কিরামের পক্ষ থেকে নেয়া। নবুয়তের যুগ কাছাকাছি হওয়া, সাহাবায়ে কিরামদের সান্নিধ্য, তাঁদের সময় পর্যন্ত আরবী ভাষার স্বাভাবিকতা বজায় থাকা ইত্যাদি কারণে তাফসীর সম্পর্কে তাদের জ্ঞানগর্ব বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •