Sunday, November 17, 2024

১০ জন প্রসিদ্ধ মুফাসসির সাহাবির পরিচয় দিন? সাহাবীদের যুগে তাফসিরের বৈশিষ্ট্য লিখুন।

প্রশ্ন: ১০ জন প্রসিদ্ধ মুফাসসির সাহাবির পরিচয় দিন? সাহাবীদের যুগে তাফসিরের বৈশিষ্ট্য লিখুন ▶ বিষয়: (IST-505) Principles and History of Tafsir Literature ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

পৃথিবীর ইতিহাসে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে যারা বিভিন্ন জ্ঞান গরিমায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন, নেতৃত্ব ও আনুগত্যের বিরল নজির স্থাপন করেছেন, মহাগ্রন্থ আল কুরআনের জীবন্ত সাক্ষীতে পরিণত হয়েছিলেন তারা হলেন আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগন। যারা পাক কালামের নিগুর অর্থ উদ্ধারে, ঘটনার প্রেক্ষাপট বিবরণে কিংবা নিজেদের রায় ও ইজতিহাদের মাধ্যমে বিজয় সুনিশ্চিত করেছেন। তাদের কোনো জুড়ি ছিল না।

নিচে ১০ জন প্রসিদ্ধ মুফাসসির সাহাবির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া হল:

(১) হযরত আবু বকর (রাঃ)

হযরত আবুবকর (রা) ৫৭১ কিংবা ৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম আব্দুল্লাহ, উপনাম আবু বকর। পিতার নাম উসমান। নবীজি তাঁকে আতিক ও সিদ্দীক উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখযোগ্য কোন তাফসীর রচনা করেননি। তবে পাক কুরআনে তার সম্পর্কে আয়াত নাজিল হয়েছে। কুরাইশ গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ায় আরবের লোকেরা তাকে দেখেও কুরআনের আহবানে সাড়া দিয়েছেন। কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে তার গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা প্রভৃতি গুনাবলি প্রভূত উপকার বয়ে এনেছে। তিনি খুলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম খলিফা ছিলেন। তিনি ১৩ হিজরির ২১ জমাদিউল উখরা ইন্তেকাল করেন।


আরো পড়তে পারেন: মাক্কী ও মাদানী সূরা কাকে বলে? মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য লিখুন।


(২) হযরত উমর (রাঃ)

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ওমর উসমান হাফস। রাসূল (সা:) কর্তৃক তাঁর প্রদত্ত গুণবাচক নাম ফারুক। পিতার নাম খাত্তাব এবং মাতার নাম হানতামা। তিনি অসাধারন প্রতিভার অধিকারী এক বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেন। তিনি অন্যদেরকে নিয়ে কাবা ঘরে নামাজ আদায় করেন, তারাবীর নামাজ জামায়াতের সাথে আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তাঁর খেলাফতকালে তিনি জনশাসনের জন্য ছড়ির ব্যবহার, মদপানে আশিটি বেত্রাঘাত কারী নিয়োগ এবং রাষ্ট্রকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করেন। উমরের সব মতের সমর্থনে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, ওমরের ইসলাম গ্রহণ ইসলামের বিজয়, তার হিজরত আল্লাহর সাহায্য এবং তার খিলাফত আল্লাহর রহমত। এক কথায়, তিনি কুরআনে শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন। হিজরি ২৩ সনের ২৪ জিলহর আবুলুলু নামে এক আততায়ীর হাতে নিহত হন।

(৩) হযরত উসমান (রাঃ)

তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন। তিনি ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আফফান, মায়ের নাম আবওয়া বিনতে কোরাইশ। তিনে ছিলেন অতিশয় নম্র, আল্লাহভীরু ও ধানঢ্য ব্যক্তি। তার সবচেয়ে বড় অবদান তিনি পবিত্র কুরআনের তৃতীয় সংকলন করেন। কুরআনের আয়তসমূহকে সূরার অন্তভূক্ত করে সূরাসমূহকে সাজিয়ে সুবিন্যস্ত করেন। মহানবী (সা:) এর রীতিনীতি অনুযায়ী কুরআনের সূরা আয়াতসমূহ সংগ্রহ করে পান্ডুলিপিতে একত্রিত করেন। সকলের এক কিরাতে কুরআন পাঠের ব্যবস্থা করেন। তিনি ৩৫ হিজরিতে এক আততায়ীর হাতে নিহত হন।

(৪) হযরত আলী (রাঃ)

তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা এবং মহানবীর (সা:) এর জামাতা ছিলেন। তাঁর পিতার নাম আবু তালিব এবং মাতা ফাতিমা। তিনি নবীজীর চাচাতো ভাই ছিলেন। তাঁর ডাক নাম আবু তুরাব। তাঁর উপাধী ছিল মুরতাজা, আসাল্লাহ, ওহায়দার। বালেকদের মধ্যে হযরত আলী প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী। হযরত আলী ছিলেন কুরআনে হাফিজ এবং একজন শ্রেষ্ঠ মুফাসসির। তিনি রাসূল (সা:) থেকে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে বহু সাহাবী ও তাবেয়ী হাদিস বর্ণনা করেছেন। মুহাজিরদের মধ্যে থেকে যে তিনজন সাহাবী ফতোয়া দিতেন তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। তিনি ৪০ হিজরিতে ১৭ রমজানে এক আততায়ীর হাতে নিহত হন।


আরো পড়তে পারেন: ১০ জন প্রসিদ্ধ মুফাসসির তাবেয়ীর পরিচয় দিন। তাবেয়ীদের যুগে তাফসীরের বৈশিষ্ট্য লিখুন।


(৫) আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ)

তাঁর আসল নাম আব্দুল্লাহ উপনাম আবু আব্দুর রহমান আল হুজালী। পিতার নাম গাফিল মাতা উম্মে আরদ বিনতে আবদে আদ। যে সকল সাহাবায়ে কেরাম থেকে কুরআনের অধিক পরিমানে তাফসীর বর্ণিত হয়েছে তিনি তাঁদের মধ্য অন্যতম। তিনি ৩৩ হিজরি সনের ৮ রমজান ৫০ বছর বয়সে মদিনায়  ইন্তেকাল করেন।

(৬) আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ)

হযরত ইবন আব্বাস ছিলেন রাসূল (সা:) এর চাচাতো ভাই। তাঁর আসল নাম আব্দুল্লাহ উপনাম আবুল আব্বাস। মাতার নাম লুবাবা বিনতুল হারেস। তিনি পবিত্র কুরআন, হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রের জ্ঞান ও পন্ডিত্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাইতো আব্বাস ছিলেন কুরআনের ভাষ্যকর বা মুখপাত্র। তিনি তাফসীরের দুর্লভ স্বল্প ব্যবহত ও অপ্রচলিত শব্দের ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাফসীর সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি ৭১ বছর বয়সে ৬৮ হিজরি সনে তায়েফে ইন্তেকাল করেন।

(৭) উবাই ইবন কাব (রাঃ)

ইলমে তাফসীর ও ইলমে কিরাতে যেসব সাহাবাগণ খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন হযরত উবাই ইবন কাব (র:) তাদের একজন। নবী করিম (স:) তার সম্পর্কে ইরশাদ করেন, সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্বারী উবাই ইবন কাব।

(৮) যায়েদ ইবন সাবিত (রাঃ)

পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিহাসে হযরত যায়েদ এর নাম সর্বাধিক স্মৃতব্য। তিনি লেখার যাবতীয় উপকরনসহ সর্বদা রাসূল (সা:) এর পাশেই থাকতেন। যখনই কোন ওহী নাজিল হতো তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তা লিখে সংরক্ষণ করতেন। পবিত্র কুরআনের খেদমত তার সারা জীবন কেটে গেছে।

(৯) আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ)

আবু মুসা আব্দুল্লাহ ইবনে কায়েস আশ আশয়ারী যিনি আবু মুসা আল আশয়ারী নামেই বেশি পরিচিত। তিনি মুহাম্মদ (সা:) এর সহচর ছিলেন এবং ইসলামের প্রথম দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বসরা ও কুফার গভর্নর ছিলেন এবং পারস্যের প্রথম দিকে মুসলিম বিজয়ের সাথে জড়িত ছিলেন।



(১০) আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়ের (রাঃ)

তিনি ছিলেন একজন সাহাবি। তার বাবা ছিলেন সাহাবি জুবায়ের ইবনুল আওয়াম ও মা ছিলেন প্রথম খলিফা আবু বকরের কন্যা আসমা বিন আবু বকর। মা আয়সা তার খালা ছিলেন। তিনি হিজরতের পর মদিনায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলীম। তিনি উমাইয়া ‍খিলাফতের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন।কিন্তু তিনি পরাজিত হন ও সেনাপতি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মক্কা অবরোধের পর তাকে মক্কায় হত্যা করা হয়।

নবীজি (সা:) ও সাহাবীদের যুগে তাফসীরের বৈশিষ্ট্য

নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং সাহাবীগণের যুগের তাফসীর অনেক ‍দিক দিয়ে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু হলো-  

  • এ স্তরে সমস্ত কুরআনের তাফসীর করা হয়নি। বরং অংশ বিশেষ তাফসীর করা হয়। তথা অস্পষ্ট আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা করা হয়। অতপর নবী করীম (সাঃ) ও সাহাবাগণের যুগের পর এ অস্পষ্টতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এমনিভাবে তাফসীরের পরিধি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আর এভাবেই পরবর্তীতে গোটা কুরআনের তাফসীর সম্পন্ন হয়।
  • এ স্তরে আয়াতের অর্থ নিয়ে তেমন কোন মতানৈক্য ছিল না।
  • অধিকাংশই সংক্ষিপ্তভাবে আয়াতের অর্থ ব্যাখ্যা দ্বারা তাফসীর করতেন। বিস্তারিত অর্থ ব্যাখ্যা প্রতি মনোনিবেশ করতেন না।
  • আভিধানিক অর্থের ব্যাখ্যাতেই তাঁদের বক্তব্যকে সীমিত রাখতেন।
  • তাফসীরে মাসূরের ক্ষেত্রে প্রশস্ততা লাভ করে। আর তা প্রসারিত হয় মহানবী (সাঃ) এর বর্ণনার পাশাপাশি সাহাবাগনের তাফসীর দ্বারা।
  • কুরআন থেকে ফিকহী মাসয়ালাসমূহ খুব কমই নির্গত করার চেষ্টা করতেন। আকীদার ক্ষেত্রে একতাবদ্ধ থাকার কারনে কুরআনের কোন আয়াতকে কোন দলের পক্ষে ব্যবহার করার কোন প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় না। দীনী ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে মতানৈক্য কম ছিল। তবে সাহাবীগনের পর  মতানৈক্য প্রকট হয়।
  • এ পর্যায়ে সাধারণত কোন তাফসীর সংকলন করা হয়নি। কেননা সংকলন শুরু হয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে। তবে কোন কোন সাহাবি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ‍কিছু বর্ণনা লিখে রাখতেন বা তাদের মাসহাফ ছিল বলে জানা যায়।


  • সে পর্যায়ে তাফসীরগুলো হাদীস বর্ণনার মতই ছিল। বরং সেগুলো হাদীসেরই শাখা বিশেষ ছিল। সুশৃংখল ও সুবিন্যাস্ত আকার ছিল। ভিন্ন ভিন্ন আয়াতের বিছিন্ন আকারে বিক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রধানত  মৌলিকভাবে বর্ণিত হয়ে আসছিল।
  • রাসূল্লাহ (সা:) ও সাহাবীগন (রা:) এর যুগে তাফসীরের ক্ষেত্রে আহলে কিতাবের সকল কথা বা বর্ণনা গ্রহণীয় ছিলনা, বরং পর্যালোচনা ও সমালোচনা করা হতো এবং সেগুলো ইসলাম পরিপন্থী ছিল তা বর্জন করা হতোল সংখ্যক সাহাবী (রা:) আহলে কিতাব নও মসলিম এর নিকট হতে ইসরাঈলী রিওয়ায়েত গ্রহণের ক্ষেত্রে নরম ভূমিকা নিয়েছেন।

• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles